আসিফা5জম্মুর কাঠুয়াতে যে ঘটনা ঘটেছে তা ভারতের প্রতিটি মানুষকে শোকাহত করেছে । দেশের প্রত্যেকটি মানুষ চাইছেন যাতে এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে অপরাধীদের সবথেকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক। আপনাদের জানিয়ে দি এই ঘটনাটিকে নিয়ে কিছু ধান্দাবাজ নোংরা রাজনীতিবিদ তাদের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছে। শুধু তাই নয় কিছু নিউজ মিডিয়া যাদের উপর দেশের মানুষ ভরসা করে তারাও ঘটনাটিকে নিজেদের মতো করে প্রচার করতে শুরু করে দিয়েছে। আমরা আজ আপনাদের এই ঘটনার উপর কিছু তথ্য জানাবো যা জানার পর আপনিও বুঝতে পারবেন আমাদের দেশের কিছু রাজনৈতিক দল ও নিউজ মিডিয়া তাঁদের স্বার্থের জন্য কতটা নীচে নামতে পারে।
- ঘটনাটি ঘটেছিল এই বছরের জানুয়ারি মাসে, যদিও তখন এই ঘটনাটিকে দেশের কোনো নিউজ চ্যানেল দেখায়নি। হটাৎ করেই এপ্রিল মাসে ঘটনাটি কে নিয়ে মিডিয়া চর্চা শুরু করে।
- আপনাদের জানিয়ে দি, যখনই এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে এবং সেক্ষেত্রে যে মেয়ের বা মহিলার সাথে এই ঘটনা ঘটে তার আসল নাম বা তার ছবি নিউজ মিডিয়া দেখায় না এবং দেখানো উচিতও নয়। কিন্তু এক্ষেত্রে বিপরীতভাবে মিডিয়া আসিফার ছবি ও নাম হাইলাইট করতে শুরু করে দেয়।
- আসিফার বাবা, মা এই ঘটনার উপর যেসব কথা বলেছেন সেই সব ঘটনা মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনারা জানতে পারছেন কিন্তু জানলে অবাক হবেন আসিফার বাবা, মাকে অনেক দিন আগেই হত্যা হয়েছে। অর্থাৎ এখন যাদেরকে আসিফার মা, বাবা বলা হচ্ছে তারা কেউই আসিফার মা, বাবা নয়। অৰ্থাৎ মিডিয়া আপনাদের কাছে মিথ্যা অপপ্রচার করছে।
- এবার আমরা আপনাদের কাশ্মীর ক্রাইম ব্রাঞ্চের চার্জশিটের যে ঘটনা বলা হয়েছে তার কিছু তথ্য জানাবো। চার্জসিটে এইসব ঘটনাকে যেভাবে তুলে ধরা হয় এক্ষেত্রে তার বিপরীতে ঘটনাটিকে সাজানো হয়েছে। চার্জশিটে তিনটে বিষয়কে প্রধানত তুলে ধরা হয়েছে প্রথমত নির্যাতিতার জাতি- মুসলিম, অভিযুক্ত- হিন্দু, ঘটনাটি হয়েছে- মন্দিরে। এই ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক রঙ দেওয়ার জন্য এটা করা হয়েছে এবং একই সাথে এক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ওপর সম্প্রদায়কে উস্কে দেওয়ার জন্য করা হয়েছে।
- আপনাদের জানিয়ে রাখি যে অভিযুক্ত বিজেপি নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকে এই ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যে, আসিফার মৃতদেহ পাওয়া গেছে বিজেপি নেতার বাড়ির সামনের একটা মন্দির থেকে। বাড়ির সামনে থেকে লাশ পাওয়া গেছে বলে গ্রেপ্তার করাটা কতটা গ্রহণীয় তা এখনো কারোর কাছেই পরিষ্কার নয়।
- শুধু তাই নয় জানলে অবাক হবেন যে মন্দির থেকে মৃতদেহ পাওয়া গেছে সেই মন্দিরে ৮ গ্রামের মানুষ পুজো দেন এবং প্রায় প্রতি ঘন্টায় কেউ না কেউ মন্দিরে উপস্থিত থাকে অথচ পুলিশ বহুদিন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজার পর মন্দিরে আসিফার লাশ খুঁজে পায়।কিছুজন তো প্রথম থেকে দাবি করে আসছিল যে মন্দিরে লুকানো কক্ষ রয়েছে কিন্তু স্থানীয় মানুষ ও ওখানের স্থানীয় মিডিয়া মন্দির পরিদর্শন করে জানিয়েছেন যে সেখানে কোনো লুকানো কক্ষ নেই।
- আসিফা যে পরিবারের কাছে থাকতো তারা এবং অভিযুক্তদের পরিবার দুইপক্ষ চেয়েছিল CBI তদন্ত হোক কিন্তু CBI তদন্ত না করে সেখানের সরকার ক্রাইম ব্রাঞ্চ দিয়ে তদন্ত করায়। অবাক করার বিষয় এই যে ক্রাইম ব্রাঞ্চের যে দল এই ব্যাপারে ইনভেস্টিগেশন করছে তাদের মধ্যে একজন নিজেই অন্য এক ধর্ষণ কান্ডে অভিযুক্ত।
- আরেকটা বিষয় যা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তা হলো আসিফার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। আসিফার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ৩ বার পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রথম দিকে রিপোর্টে বলা হয়েছিল এটা হত্যার ঘটনা এটা ধর্ষণ নয়। পরে এটাকে পরিবর্তন করে বলা হয়েছে ধর্ষণ করে খুন।
- কিছু মিডিয়া প্রচার করেছিল ওখানের হিন্দু মঞ্চের জন্য আসিফার পরিবারকে তাদের স্থান ছেড়ে পালাতে হচ্ছে। কিন্তু আসিফার পরিবার জানিয়েছে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি, পুরোটাই মিথ্যা অপপ্রচার। আমরা খুবই গরিব এবং হিন্দুদের এলাকায় আমরা গোপশু চোরাই। হিন্দুরা আমাদের সাথে খুব ভালোভাবে ব্যবহার করে।
- আসিফার হত্যার আগে আসিফার পরিবারে একটা নিজেদের মধ্যে বিবাদ হয়েছিল। আসলে আসিফাকে কে নিজের কাছে রাখবে সেই নিয়ে পরিবারের মধ্যেই গন্ডগোল হয়েছিল কারণ আসিফার নামে অনেক সম্পত্তি আছে এবং ২০ লক্ষ টাকার FD করা আছে। এখন আসিফা যে ব্যাক্তির কাছে থাকবে আসিফার সম্পত্তিও তার কাছেই থাকবে। এই ঘটনা অবশ্য মিডিয়া আপনাদের কাছে তুলে ধরেনি এবং ধরবেও না।
দেশের মিডিয়া তাদের নিজের স্বার্থের জন্য কতটা নীচে নেমে গেছে।আসলে মিডিয়ার উদেশ্য এটা নয় যে কিভাবে দোষীরা শাস্তি পাবে তার জন্য লড়াই করা। তাদের উদেশ্য যেভাবেই হোক বিষয়টিকে টাকার লোভে সাম্প্রদায়িক এ পরিণত করা। এটা খুবই দুর্ভাগ্যপূর্ণ ব্যাপার যে আমাদের দেশের মিডিয়া ও রাজনেতারা বিষয়টিকে স্বার্থের জন্য নিজেদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিষয়ে পরিণত করতে শুরু করেছে।
Be First to Comment